অলরেডি সবাই ফেঁসে গেছি
লিখেছেন লিখেছেন এফ শাহজাহান ১৩ জুন, ২০১৩, ০৩:০৭:৫২ দুপুর
আপনি বিশ্বাস করুন আর নাই করুন,তলে তলে আপনি অলরেডি ফেঁসে গেছেন। লেখাটা পড়া শেষ করলেই বুঝবেন কোথায় ফেঁসে গেছেন।
এখন যেকোন সময় আপনাকে ফাঁসিতে ঝুলতে হতে পারে। অথবা যাবজ্জীবন চৌদ্দ শীকের ভেতরে জীবন কাটাতে হতে পারে। তা না হলেও আপনার যদি ভাগ্য খুবই ভালো হয় তাহলে নিদেন পক্ষে চৌদ্দবছর জেলের ঘানি টানতে হবে। আপনি যদি মানুষ হোন তাহলে আপনাকে এই মরণফাঁদে পড়তেই হবে। কারন সম্প্রতি মহান জাতীয় সংসদে যে আইনটি পাশ হয়েছে তা একশতভাগ মানুষের জন্যই পাশ হয়েছে। এটি কোন জীব জন্তু বা দৈত দানবের জন্য করা হয়নি।
“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার ওপরে নাই”,কথাটা শুনতে এবং বলতে বেশ ভালো মনে হলেও এখন বাংলাদেশে মনে হচ্ছে এটা একটা ভেকটার্ম। সময়ের প্রেক্ষিতে বলা যায় এটা একটা ফেকটক।
কার কে ? কে কার ?
রাষ্ট্রের জন্য মানুষ,না মানুষের জন্য রাষ্ট্র ? সরকারের জন্য জনগন,না জনগনের জন্য সরকার ? মানুষের জন্য সংবিধান, না সংবিধানের জন্য মানুষ ? প্রশ্নগুলো অনেক পুরাতন। নতুন করে এসব বলার অর্থ কী ?
সময় পাল্টেছে। দিন বদলে গেছে। দিনবদলের সাথে সাথে পাল্টে গেছে এসব প্রশ্নের উত্তর। তাই নতুন করে এসব প্রশ্ন আবার সামনে এসেছে।
দু:সময় বলছে, মানুষের জন্য রাষ্ট্র নয়,রাষ্ট্রের জন্যই মানুষ। জনগনের জন্য সরকার নয়,সরকারের জন্যই জনগন আর মানুষের জন্য সংবিধান নয়,সংবিধানের জন্য মানুষ।
তাহলে এবার স্বীকার করুন,সবার ওপরে সরকার সত্য,তাহার ওপরে নাই। কিংবা সবার উপরে রাষ্ট্র সত্য তাহার ওপরে নাই। বলতে পারেন এখন সবার উপরে সংবিধান তাহার উপরে নাই।
সবার উপরে সরকার সত্য ?
হ্যাঁ, সেই মহান রাষ্ট্র এবং সরকারের জন্য এমন সব আইন করা হচ্ছে যাতে আমরা সবাই ফেঁসে যাচ্ছি। গত ১১ জুন মহান জাতীয় সংসদে সন্ত্রাস বিরোধী (সংশোধন)বিল পাশ হবার পর অলরেডি আমরা ফেঁসেও গেছি। এখানে সরকার এবং সরকারের নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশ্য যতই মহৎ হোক না কেন, এই আইনের অপব্যবহার ঠেকিয়ে কেউ আপনার জীবন ধ্বংস করা ঠেকাতে পারবে না।
মানবাধিকার কী ?
এই আইনে মানবাধিকারের প্রশ্ন তো দুরের কথা, কোন মানুষকে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে গন্য করার সুযোগ নেই। সন্দেহ সংশয় আর আইনের অপব্যবহারের আশংকায় সব মানুষকেই সব সময় তটস্থ থাকতে হবে।
আপনি কখন মৃত্যুকুপে পড়তে পারেন ?
এই আইনে কে, কখন, কাকে ফাঁসাবে তা একমাত্র সরকারই বলতে পারবে। আপনার মানবাধিকার,বাক স্বাধীনতা,নির্ভয়ে কথা বলার অীধকার তো দুরের কথা সরকার বা কেউ যদি মনে করেন যে, আপনি কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের চিন্তা করছেন, তাহলেই ফেঁসে যাবেন এবং কমপক্ষে ১৪ বছরের জেল খাটতে হবে। আপনাকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করতে হবে না। সরকার যদি সন্দেহ করে অথবা মনে করে যে আপনি কোন সন্ত্রাসী কর্মককান্ডে প্ররোচনা দিয়েছেন,সমর্থন দিয়েছেন,ষড়যন্ত্র করেছেন অথবা সহায়তা করেছেন তাহলেই আপনার যাবজ্জীবন। আর যদি এটি নিজ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে না হয়ে অন্য রাষ্ট্রের জন্য হয়, তাহলে আপনার ফাঁসি। তার মানে নিজের চেয়ে পরের রাষ্ট্রই আমাদের রাষ্ট্রের কাছে বড় ?
সেই জনগন এখন মৃত্যুকুপের কিনারে
যে জনগন ভোট দিয়ে মহান সংসদ গঠন করেছেন এবং মাননীয় সংসদ সদস্যগনকে নির্বাচিত করে জাতির ভাগ্য বদলের জন্য সংসদে পাঠিয়েছেন তারাই এখন দেশের জনগনকে মৃত্যুকুপের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছেন। গত ১১ জুন মহান জাতীয় সংসদে সন্ত্রাস বিরোধী(সংশোধন) বিল ২০১৩ পাশ হয়েছে। এটি এখন রাষ্ট্রপতির সম্মতির অপেক্ষায়। এরপর গেজেট হলেই আইনে পরিনত হবে। তখন কোন মানুষকেই আর মানুষ হিসেবে গন্য করা যাবে না। কারন এই আইনের অপব্যাবহার করে যে কেউ যে কোন সময় আপনাকে এমন ভাবে ফেঁসে দিবে যাতে আপনার মৃত্যুদন্ড অথবা কম করে হলেও ১৪ বছরের কারাদন্ড হবে।
এই আইনটি কেমন ?
সোজা কথা এই আইন আমাদের মহান সংবিধানের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। দেশের প্রচলিত সকল স্বাক্ষ্য আইনের পরিপন্থী। সকল স্বাক্ষ্য আইনকে অচল করে দিয়েছে এই আইন। এই আইনে অপরাধ করার প্রয়োজন নেই,শুধু আপরাধের প্রচেষ্টা প্রমান করলেই আপনার লাইফ শেষ।
এই আইনের ৭,১৮ ও ২০ ধারায় যেকোন দল বা সংগঠন যে কোন সময় নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।
১১ ও ২৩ ধারা মোতাবেক যাকে খুশি গ্রেফতার,নাজেহাল,জেল এবং ফাঁসি দেয়া যাবে।
৪০ ধারা মোতাবেক পুলিশ যখন খুশি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিতে পারবে।
সংসদে সদ্য পাশ হওয়া এই আইনের ২১ ধারা মোতাবেক ইন্টারনেট ভিত্তিক সকল প্রকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার আপনার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনবে। ২১ এর ৩ উপধারা আমাদের সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সম্পুর্ন অবৈধ।
জাতিসংঘের ৯টি কনভেনশন সরসরি এই আইনের তফশিলভুক্ত করা হয়েছে। যা পৃথিবীর ইতিহাসে কোন দিন কোন রাষ্ট্র বা সংসদ করতে পারেনি বা করার চেষ্টাও করেনি।
সবচেয়ে ভয়ংকর যা
এই আইনে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে ২১ ধারা । এই ধারায় সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কঠেঅরভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয়েছে। ইন্টারনেট ভিত্তিক ই-মেইল,ফেসবুক,টুইটার,স্কাইপিসহ যেকোন যোগাযোগ মাধ্যম আপনার জন্য এখন মৃত্যুকুপ। এসব মাধ্যমের যেকোন মন্তব্য,বক্তব্য,বিবৃতি,স্থির অথবা সচল চিত্র সবটাই স্বাক্ষ্য প্রমান হিসেবে গ্রহন করবে আদালত । সেইসঙ্গে আপনাকে সব সময় আড়ি পেতে পর্যবেক্ষন করা হবে। আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাস তো দুরের কথা, কোন লাইক বা কমেন্ট যদি এমন হয় যে, যাতে কেউ সন্দেহ করতে পারে আপনি কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্ররোচনা দিচ্ছেন অথবা,সমর্থন দিচ্ছেন অথবা ষড়যন্ত্র করছেন তাহলে আপনার হায়াত শেষ।
তাহলে বিপদটা কোথায় ?
অপনার নাম পরিচয় ব্যাবহার করে এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে কেউ যখন খুশি আপনার জীবনটা ধ্বংস করে দিতে পারে। আপনি জীবনে হয়তো ফেসবুক চোখে দেখেন নি অথবা আপনার চৌদ্দ গোষ্ঠীতে কেউ কোন কম্পিউটার চোখে দেখেনি তবুও আপনাকে চৌদ্দ বছর চৌদ্দ শীকের ভেতর ধুকে ধুকে মরতে হবে। ধ্বংস করে দিতে পারে আপনার চৌদ্দগোষ্ঠী।
রাষ্ট্র ও সরকার তো আমারই জন্য
হ্যাঁ ,তাতেও আপনার বাঁচার উপায় নেই। সরকার বা রাষ্ট্রের যথেষ্ঠ সদিচ্ছা থাকলেও এবং সরকার ও রাষ্ট্র কখনেই এই আইনের অপব্যবহার না করলেও যে কেউ এই আইনের অপব্যবহার করে আমাকে আপনাকে খেয়ে ফেলতে পারে। ধ্বংস করে দিতে পারে আমার আপনার সবকিছু।
এটিই হচ্ছে দিনবদলের সর্বোচ্চ সনদ
এই আইনটি হচ্ছে আমাদের দিনবদলের সনদ। ভাগ্যবদলের গ্যারান্টি,ডিজিটাল সরকারের ডিজিটাল বিপ্লব।
বাঁচার উপায় কী ?
এখন মহামান্য রাষ্ট্রপতিই শেষ ভরসা। তিনি যদি এই বিলে সম্মতি না দেন তাহলে এই মৃত্যুকুপের কিনারা থেকে উদ্ধার পাওয়া যেতে পারে।সাবেক রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদ যে কারনে যে ভাবে জননিরাপত্তা বিল ফেরত পাঠিয়ে জাতিকে বাঁচিয়েছিলেন,ঠিক সে রকম যদি আমাদের মহামান্য নতুন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এই বিলটিতে সম্মতি না দিয়ে ফেরত পাঠান তাহলে মানুষ মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারবে। নচেৎ নয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি কী সেটা পারবেন ? আপনার কী মনে হয় ?
বিষয়: Contest_mother
২২২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন